রূপময় বাংলাদেশ Headline Animator

28 March, 2013

চৈতালি পূর্ণিমা




আজ চৈতালি পূর্ণিমা। বিশেষ কিছু এলাকায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বাঙ্গালি জাতি গোষ্ঠীর কাছে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের দিন। আজ হোলি। হঠাৎ করেই ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে গেলো। বাবার চাকরির সুবাদে আমার ছেলেবেলা কেটেছে মানিকগঞ্জে। তখন দেখতাম চৈতালি পূর্ণিমার দিন মানেই ওখানকার গ্রামাঞ্চলে একটি বিশেষ দিন। এই দিনে ঘরে ঘরে মজাদার কিছু খাবার তৈরি করা হতো। 


নিজেরা রঙ মাখামাখি করার পাশাপাশি তাদের পোষা গরুর গায়েও অতি যত্নে রঙ দিয়ে বাহারি নকশা এঁকে সাজিয়ে তোলা হতো। এই দিনে হতো গরু দাবাড়, কুস্তি, ঘুড়ি উৎসব আর নদীর পাড়ে বসতো মেলা। কি থাকতো না সেই মেলায়? বিন্নি খই, ঢ্যাপের খই (শহরের মানুষ হয়তো জানেই না ঢ্যাপ কি জিনিস। শাপলার ফলকে ঢ্যাপ বলে), সাঁজের মিষ্টি, কদমা, তিলের নাড়ু, বাহারি পদের নিমকি কটকটি, জিলিপি, অমৃতি আর টাটকা এলাচের গন্ধ মাখা তুলতুলে রসগোল্লা সহ আরও কতো কি খাবারের দেখা মেলত তার সব নাম মনেও নেই। 


মেলার একধারে বসতো বেদেনির দল। সাপের খেলা আর চোখ জুড়ানো ভেল্কি বাজি দেখিয়ে হাততালির পাশাপাশি খুচরো পয়সাও পেত তারা। কেউ বা কাঁচের বাসনকোসন সাজিয়ে নিয়ে দোকান দিয়ে বসতো। কুমোরের দল আসতো তাদের তৈরি করা মাটির জিনিসপত্র নিয়ে। বাঁশের তৈরি ডালা, কুলো, ঝাড়ু, টুকরি, চাটাই, মাছ ধরার পলো এই সব নিয়ে আসতো কিছু লোক। আরও থাকতো রঙবেরঙের কতো কতো খেলনা। ঘর-গেরস্থালির নিত্য প্রয়োজনীয় দা, বটি, ছুরি, কাস্তে, 

কোদাল, নিড়ানি, খুরপি এইসব নিয়ে আসতো কামারেরা। মেলার একেবারেই এক প্রান্তে বসাত চরকি। আরোহীদের নিয়ে সেই রঙচঙে চরকি ক্যাঁচর ক্যাঁচর শব্দ তুলে হেলে দুলে পাক খেত। 

সব কিছু মিলিয়ে কতই না বর্ণিল ছিল সেই সব দিন। এখন কর্মব্যস্ত শহুরে জীবনে সেই রঙ আর রূপ কোনটারই দেখা মেলে না। 

বি।দ্র। ছবিগুলি গুগল থেকে নেয়া হয়েছে।