বাংলাদেশ অপরূপ রূপের সম্ভারে সমৃদ্ধ এক দেশ। এই দেশে এক সাথে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মিলে বাস করে নানা পেশার লোক। বৈচিত্র্য ময় এই দেশে বিচিত্র পেশার লোক আছে। আজ আমি তেমনি এক বিচিত্র পেশা নিয়ে কথা বলব। আজ আমি মৃৎশিল্প কে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
"মৃৎ" মানে মাটি আর "শিল্প" মানে সুন্দর কোনও বস্তু বা বিষয়। মৃৎশিল্প বলতে তাহলে দাঁড়ায় যে মাটি দিয়ে তৈরি করা কোনও সুন্দর বস্তু বা জিনিস। মাটিকে কাদায় পরিণত করে তা দিয়ে বিভিন্ন প্রকার আদল বা আকৃতি তৈরি করে তা রোদে রেখে শুকানো হয়। ভালো করে শুকিয়ে যাবার পর তা ৫০০ থেকে ৬০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় পোড়ানো হলে মাটি তার স্বাভাবিক রঙ ও রূপ হারিয়ে অপরিবর্তনীয় এক নতুন রূপ পায়। একেই মৃৎশিল্প বলে। তাই বলে সব রকমের মাটি দিয়ে কিন্তু মাটির জিনিস তৈরি করা যায় না। এর জন্য দরকার হয় এক বিশেষ প্রকার আঠালো মাটি। এই মাটির নাম এঁটেল মাটি। মাঝ নদী কিংবা বিলের গভীর থেকে তুলে নিয়ে আসা হয় এই মাটি। শুকনো মৌসুমে নৌকা বোঝাই করে মাটি তুলে এনে স্তুপ করে রাখা হয় বাড়ির একধারে। যারা মাটির জিনিস তৈরি করে তাদের বলা হয় "কুমার" বা "কুমোর" বা "কুম্ভকার"। গ্রাম গঞ্জে এদেরকে "পাল" ও বলা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের মৃৎশিল্পের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। এখন থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগের সভ্যতায় ও মৃৎশিল্পের ব্যবহারের প্রমান পাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রত্নতত্ত্ববিদ দের আবিষ্কৃত প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন গুলিতে টেরাকোটার সন্ধান মিলেছে। মাটির সাথে খড় বা তুষ মিলিয়ে মূর্তি বা দৃশ্য তৈরি করে তা আগুনে পুড়িয়ে টেরাকোটা তৈরি করা হয়। মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, ময়নামতি প্রভৃতি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানসমূহে টেরাকোটার ব্যাবহার দেখা যায়। অপরদিকে সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা এবং মায়া সভ্যতায় ও টেরাকোটার ভাস্কর্যের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ থেকে বুঝা যায় যে প্রাচীন বাংলার মৃৎশিল্প কতোখানি সমৃদ্ধ ছিল।
প্রাচীন বাংলায় মাটির তৈরি জিনিসের প্রচুর চাহিদা ছিল। ঘর গৃহস্থালির নানা কাজে মাটির জিনিসের কদর ছিল খুব। সাধারণ জনগোষ্ঠীর রান্না বান্নার কাজেও মাটির তৈরি হাঁড়ি পাতিল ব্যবহার করা হতো। পরে অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িপাতিল এসে সে জায়গা দখল করে নেয়। অভঙ্গুর এবং দীর্ঘ স্থায়িত্তের জন্য লোকে মাটির জিনিস বাদ দিয়ে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি জিনিসের দিকেই বেশি আগ্রহী হয়ে উঠলে মৃৎশিল্প কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। কিন্তু পরে আবার তারা তা কাটিয়ে উঠতে ও সক্ষম হয়েছে। এখন তারা মাটি দিয়ে যুগোপযোগী বিভিন্ন প্রকার প্রয়োজনীয় এবং সৌখিন দুই রকমের জিনিস ই তৈরি করছে।
মাটির তৈরি জিনিস এখন তার জায়গা করে নিয়েছে সাধারণ মধ্যবিত্তের ঘর থেকে সমাজের উঁচুশ্রেণীর ঘর পর্যন্ত। শো পিস, ফুলের টব, দেয়ালে ঝোলানোর জন্য বিভিন্ন রকম দৃশ্য বা বিখ্যাত ব্যক্তিত্তের প্রতিকৃতি, ফুলদানি, শখের হাঁড়ি বা কলসি এই সব জিনিস এখন সমাজের সব স্তরেই তার নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে। আর প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য বাহী মাটির বাসন কোসন এখন আবার ফিরে এসেছে। উঁচু দরে বিক্রি হয় এই সব সৌখিন তৈজসপত্র।
বি।দ্র। ছবিগুলি গুগল থেকে নেয়া হয়েছে।


No comments:
Post a Comment