প্রতিটি জাতিরই নিজস্ব কিছু লোকজ শিল্প থাকে। এর মাঝে কুটির শিল্পের মাধ্যমেই প্রতিফলিত হয়ে থাকে কোনও দেশ বা জাতির সভ্যতার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও উন্নয়নের ধারা। কোনও রকম যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই খালি হাতে কাজ করে মানুষ যেখানে তার সৃজনশীলতা ও নিপুণতার পরিচয় তুলে ধরতে সক্ষম হয় তাই হস্ত শিল্প। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট বড়ো নানা রকম শিল্প।
বাংলাদেশ থেকে কিছু সংখ্যক উদ্যোক্তার প্রচেষ্টা আর বিদেশীদের আগ্রহের কারনে প্রতিবছর লাখ লাখ ডলারের হস্তশিল্পজাত পণ্য রপ্তানি করা হয়। তবে এই দেশে সরকারি পর্যায়ে হস্তশিল্পজাত পণ্যের জন্য কোনও নীতি নির্ধারিত হয়নি। বাংলাদেশের হস্তশিল্প প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির দেয়া তথ্য মতে জানা যায় যে বর্তমানে পাটের তৈরি নানা রকম শৌখিন জিনিস, শতরঞ্জি, বাঁশ ও বেতের তৈরি নানা আকৃতির ঝুড়ি, পাটের তৈরি থলে, পাপোশ ইত্যাদি জাতীয় নানারকম হস্ত শিল্পজাত পন্য ব্যাপক হারে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এর পাশা পাশি টেরাকোটা, পাখির খাঁচা, নকশিকাঁথা, মোমবাতি, চামড়ার তৈরি গয়নার বাক্স, চামড়ার তৈরি মুদ্রার বাক্স, বেল্ট ইত্যাদি পন্য ও বিদেশীদের আগ্রহের কারনে রপ্তানি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের হস্তশিল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা বলেছেন যে এই দেশের হস্ত শিল্পকে যুগোপযোগী করে তুলতে পারলে আরও ভালো হতো। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া তা মোটেও সম্ভব নয়। আধুনিকায়ন করা হচ্ছে না বলে আশে পাশের অন্য সব দেশের তুলনায় এই দেশের শিল্প পিছিয়ে পড়ছে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশি হস্তজাত পণ্যের বিপুল চাহিদা থাকার পরেও বাংলাদেশের হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানি একটি নির্দিষ্ট সীমানার ভেতরেই আটকা পড়ে আছে।
বাংলাদেশের হস্তশিল্পের অনেকগুলি দিকের মাঝ থেকে আজ আমি বাঁশ ও বেতের শিল্প নিয়ে কিছু কথা বলবো। বাঁশ ও বেতের শিল্প বাংলাদেশের অতি প্রাচীন শিল্প গুলির মাঝে একটি। এক সময়ে বাঁশ ও বেত দিয়ে গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরি করার জন্য একটি আলাদা সম্প্রদায় ছিল। এদের কে “হাঁড়ি” বলা হতো।
এ দেশের হস্ত শিল্প বিশেষত এলাকা ভিত্তিক হলেও বাঁশের শিল্প ছড়িয়ে আছে পুরো দেশ জুড়েই। বাঁশ মুলত এক রকমের বিশেষ শ্রেনির বড়ো ঘাস। বাঁশের কয়েক রকম প্রজাতির মাঝে শুধুমাত্র মাকলা বাঁশ দিয়েই নিত্য ব্যবহার্য এবং সৌখিন জিনিসপত্র তৈরি করা সম্ভব। বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বলেই বাঁশের শিল্পের প্রসার ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশ জুড়ে। আর সহজলভ্য বলে এর দ্বারা তৈরি পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা ও অনেক বেশি। বাংলাদেশের উঁচু-নিচু সব রকমের পরিবারেই বাঁশের তৈরি জিনিশের ব্যবহার লক্ষ্য করা করা যায়।
শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বাঁশের তৈরি পণ্যের চাহিদা ও ব্যবহার দুই-ই বেশি। বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয় নানা রকম দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিস ছাড়াও নানা রকম সৌখিন জিনিস। নিত্য ব্যবহার্য জিনিসের তালিকায় আছে ঝাড়ু, কুলা, ডালা, চালুনি, ঝাঁকা, খালুই (গ্রামে বাজার করতে এই বিশেষ প্রকার টুকরি ব্যবহৃত হয়) মাথাল বা টোকা ( রোদ বা বৃষ্টি থেকে রেহাই পাবার জন্য কৃষকেরা এটি মাথায় পরে থাকেন) চাটাই, ছোট বড়ো বাঁশের টুকরি, মাছ ধরার চাই ও পলো, ছিপ, হাতপাখা ইত্যাদি।
নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের সীমানা ছাড়িয়ে এখন কারিগরেরা বাঁশ দিয়ে তৈরি করেন নানা প্রকার শৌখিন জিনিস। এর মাঝে মাঝে আছে বুক শেলফ, ফুলদানি, ওয়াল ম্যাট, মোড়া, কলমদানি, খেলনা সামগ্রী, ট্রে, বিভিন্ন রকম চামচ ও খুন্তি, বিভিন্ন প্রকার শো পিস ইত্যাদি। শুরুতে অতোটা কদর না থাকলেও এখন এই সব জিনিসের চাহিদা বেড়েছে। শহরের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেনির রুচিশীল লোকেরা এই সব পণ্যের প্রধান ক্রেতা। এই সব শৌখিন পন্য এখন দেশ ছাড়িয়ে দেশের বাইরে ও নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে।
বি।দ্র। ছবিগুলি গুগল থেকে নেয়া হয়েছে।
(চলবে)

শেষ ছবিটা lokfolk.blogspot.com থেকে নিয়েছেন।
ReplyDeleteসূত্র উল্লেখ করলে ভাল লাগে।
লোকফোকের পক্ষে
বিশ্বেন্দু