রূপময় বাংলাদেশ Headline Animator

03 November, 2012

বাংলাদেশের হস্তশিল্প : বাঁশ ও বেতের শিল্প ২


বেতের শিল্প বাঁশের শিল্পের মতো যদিও পুরো দেশ জুড়ে ছড়ানো নয় – তার পরেও এই শিল্প দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও তার নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে। বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভাবে মূলত সিলেটেই বেতের সামগ্রী তৈরি করা শুরু হয়। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে সিলেটের বেত শিল্প অনেক দূর এগিয়েছে। কয়েক বছর আগে সিলেটে মাত্র হাতে গোণা কিছু সংখ্যক বেতের আসবাবের দোকান ছিল।

১৮৮৫ সালে সিলেটে প্রথম বেতের আসবাব ম্যানুফেকচার করা হয়। তখন সিলেটে যে পরিমান বেত তৈরি হতো তা দিয়েই প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো যেতো। কিন্তু ১৯২৬ সালের পর থেকে ওখানে বেতের উৎপাদন কমে আসতে থাকে। এখন চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় বেতের বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।

সিলেটে এখন প্রায় ৫০ রকমের বেতের সামগ্রী তৈরি করা হয়। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হল – ম্যাগাজিন র‍্যাক, সোফা সেট, খাট, জুতার র‍্যাক, চায়ের ট্রলি, পড়ার টেবিল - চেয়ার, ড্রেসিং টেবিল, খাবার টেবিল – চেয়ার সেট, কফি টেবিল, বইয়ের শেলফ, ইজি চেয়ার, বাগানের চেয়ার সেট, খবরের কাগজের ঝুড়ি, কাপড় রাখার স্ট্যান্ড, বাচ্চাদের খাট, মোড়া, দোলনা, বোতল রাখার র‍্যাক, প্ল্যানটার, ওয়ারড্রব, আয়নার ফ্রেম, কর্নার স্ট্যান্ড, পার্টিশন ইত্যাদি। এই সব পণ্যের বেশির ভাগই ইংল্যান্ডে রপ্তানি করা হয়। তা ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানেও বেতের তৈরি এই সব পণ্য সামগ্রী বিক্রি করা হয়। 

কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর এলাকায় বেতের সামগ্রী তৈরি করা হয়। তবে এই সব এলাকায় প্রধানত দেশি ও বার্মা থেকে আনা বেত দিয়ে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্যে বেতের পন্য সামগ্রী তৈরি করা হয়। এই সব পণ্যের রয়েছে – সোফা সেট, খাট, মোড়া, দোলনা, ড্রেসিং টেবিল, ইজি চেয়ার, রকিং চেয়ার ইত্যাদি। স্থানীয় কারিগরেরা বলেছেন যে উপযুক্ত পৃষ্ঠ পোষকতা পেলে তাদের তৈরি বেতের পন্য সামগ্রী দেশের বাইরেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষিপুর এলাকায় ও বেতের সামগ্রী তৈরি করা হয়। সমুদ্র উপকূলবর্তী হওয়ায় পরিবহণ সুবিধা পাওয়ায় এই বিস্তৃত এলাকা জুড়ে বেতের শিল্প গড়ে উথেছিল এক সময়। কিন্তু এখন প্রয়োজনীয় পুঁজি, উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা, বাজারজাতকরণের জটিলতা  এবং কাঁচামালের সংকটের কারনে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়ে জীবন ধারনের জন্য অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। সোনা গাজীতে এখনও বেতের শিল্প টিকে আছে এবং স্থানিয় পেশাজীবীরা তাদের পুরনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। এই এলাকায় তৈরি করা হয় ডুলা, মোড়া, জুংগর, হাত পাখা, হাঁফটা, মই দোড়া, আন্তা ইত্যাদি। সোনাগাজীর তৈরি শীতল পাটির চাহিদা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশের বাইরে ও রয়েছে।

No comments:

Post a Comment